ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

 

  ব্যাংক লোন পাওয়ার       উপায়


ব্যবসা কিংবা ব্যক্তিগত অনেক কাজে ব্যাংক ঋনের প্রয়োজন হয়। অনেকে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় জানেনা। ব্যাংক লোন চাই, বললেই আসলে ব্যাংক লোন পাওয়া যায় না।

কথায় আছে বিপদে বন্ধুর পরিচয় এবং আপনি যখন আর্থিক সংকটে পড়েন তখন বন্ধু হিসেবে এগিয়ে আসে ব্যাংক, ব্যাংক লোন সুবিধা নিয়ে। ব্যাংক আপনাকে অনেক কিছু করতে সাহায্য করবে। যদিও, সুদ নেওয়ার ব্যাপারে এক চুলও ছাড় দেয় না ব্যাংক।

যাইহোক, ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার প্রক্রিয়া একটু জটিল। তাই যে কেউ চাইলেই ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারে না। লোন প্রক্রিয়ার যেকোনো একটি ভুলের কারণে, আপনার লোনের আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে। আপনার যদি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় জানা থাকে তাহলে, আপনি খুব সহজে লোন পেতে পারেন।

আপনি কি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার কথা চিন্তা করছেন? এবং ব্যাংকের জটিল প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত? তাহলে চলুন জেনে আসি ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়।

ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়

ব্যাংক লোন কি?

ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য গ্রাহকদের অর্থ ঋণ দিতে প্রস্তুত হয়, আর এটাই ব্যাংক লোন। ব্যাংক লোনের শর্ত হিসেবে, গ্রাহকদের প্রতি মাসে বা প্রতি বছরের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ও সুদ প্রদান করতে হয়। 

ব্যাংক লোনের ধরন ও প্রকারভেদ:

ব্যাংক বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের লোন প্রদান করে থাকে। লোন অনেক ধরনের হতে পারে। যা আপনার উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। আপনি কোন ধরনের লোন, কি উদ্দেশ্যে নিতে চান, সেটা আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে প্রথমে। 

ব্যাংক লোনের ধরন:

  • পার্সোনাল লোন: যেকোনো ব্যক্তিগত কাজের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য লোন। 
  • বিজনেস লোন: যেকোনো ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য লোন।
  • হোম লোন: বাড়ি কেনার বা তৈরীর জন্য লোন।
  • অটো লোন: যেকোনো ধরনের গাড়ি কেনার জন্য লোন।
  • এডুকেশন লোন বা স্টুডেন্ট লোন: পড়াশোনা করার জন্য লোন।
  • প্রবাসী লোন: দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য লোন।
  • কৃষি লোন: যেকোনো ধরনের কৃষি কাজ করার জন্য লোন।

ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ:

  • দীর্ঘমেয়াদী লোন: দীর্ঘমেয়াদী লোন হলো, যেসব লোন এক বছরের বেশি সময়ের জন্য দেওয়া হয়। যেমন, পার্সোনাল লোন, এডুকেশন লোন, হোম লোন, বিজনেস লোন ইত্যাদি।
  • স্বল্প মেয়াদী লোন: স্বল্প মেয়াদী লোন হলো, যেসব লোন এক বছরের কম সময়ের জন্য দেওয়া হয়। যেমন, কৃষি লোন, প্রবাসী লোন ইত্যাদি।

বাংলাদেশের সেরা ব্যাংক

বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক রয়েছে, যেখান থেকে অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের লোন প্রদান করে থাকে। বিভিন্ন ব্যাংকে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় বিভিন্ন রকম।

বাংলাদেশের সেরা কিছু ব্যাংকের নাম:

  • HSBC Bank
  • Dutch Bangla Bank
  • Sonali Bank
  • Islamic Bank Bangladesh Limited
  • Grameen Bank
  • Janata Bank
  • BRAC Bank
  • Standard Chartered Bank
  • Prime Bank Limited
  • Bangladesh Bank
  • EBL Bank
  • First Security Bank
  • Al Arafah Bank
  • Asian Bank
  • City Bank

কোন ব্যাংক থেকে লোন নিবেন?

আমাদের দেশে প্রায় সব ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে। সব ধরনের ব্যাংক লোনের সুবিধা দিলেও, আপনাকে বেছে নিতে হবে আপনি কোন ব্যাংক থেকে লোন নিবেন। যে ব্যাংকের সবচেয়ে কম ইন্টারেস্ট রেট, সেই ব্যাংক থেকে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সহজ ও সুবিধা বেশি।

সব ব্যাংকের সব ধরনের লোনের সুবিধা ভালো নাও হতে পারে। তাই, আপনাকে ভেবেচিন্তে আপনার লোন এর ধরন অনুযায়ী ব্যাংক নির্ধারণ করতে হবে।

আপনি যেসব ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারেন,

১. স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এনি পারপাস লোন

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক আপনাকে যে কোন কাজের জন্য লোন প্রদান করবে, তাদের এনি পারপাস লোন এর মাধ্যমে। আপনি যদি ৫ লাখ টাকা লোন নেন ৫ বছরের জন্য তাহলে, আপনাকে যে ইন্টারেস্ট রেট এবং মাসিক ইনস্টলমেন্ট দিতে হবে।

  • ইন্টারেস্ট রেট: ৯.৯%
  • মাসিক ইনস্টলমেন্ট: ১০,৫৯৮.৯৪ BDT

২. সিটি ব্যাংক পার্সোনাল লোন

সিটি ব্যাংক পার্সোনাল লোন, কম সুদে আপনাকে লোন সুবিধা প্রদান। আপনি যদি ৫ লাখ টাকা লোন নেন ৫ বছরের জন্য তাহলে, আপনাকে যে ইন্টারেস্ট রেট এবং মাসিক ইনস্টলমেন্ট দিতে হবে।

  • ইন্টারেস্ট রেট: আপনি যদি চাকরিজীবী হয় তাহলে, আপনার জন্য ইন্টারেস্ট রেট ১০.৫%। কিন্তু আপনি যদি ব্যবসায়ী হন তাহলে, আপনার জন্য ইন্টারেস্ট রেট ১৩%
  • মাসিক ইনস্টলমেন্ট: ১০,৭৪৬.৯৫ BDT

৩. ব্র্যাক ব্যাংক পার্সোনাল লোন

ব্রাক ব্যাংক পার্সোনাল লোন প্রদান করে কম সুদে। বাংলাদেশের সেরা লোন সুবিধার মধ্যে এটি একটি। আপনি যদি ৫ লাখ টাকা লোন নেন ৫ বছরের জন্য তাহলে, আপনাকে যে ইন্টারেস্ট রেট এবং মাসিক ইনস্টলমেন্ট দিতে হবে।

  • ইন্টারেস্ট রেট: ইন্টারেস্ট রেট ১০.৫% থেকে ১২.৭৫% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • মাসিক ইনস্টলমেন্ট: ১০,৭৪৬.৯৫.৯৪ BDT

৪. ইবিএল এসইওর লোন

ইবিএল ব্যাংকের সেরা লোন হচ্ছে তাদের অল পারপাস লোন বা এসইওর লোন। এই লোন ইন্সুরেন্স সুবিধা দিয়ে থাকে। আপনি যদি ৫ লাখ টাকা লোন নেন ৫ বছরের জন্য তাহলে, আপনাকে যে ইন্টারেস্ট রেট এবং মাসিক ইনস্টলমেন্ট দিতে হবে।

  • ইন্টারেস্ট রেট: ১০.৫%
  • মাসিক ইনস্টলমেন্ট: ১০,৭৪৬.৯৫ BDT

৫. ট্রাস্ট ব্যাংক স্যালারি লোন

আপনি যদি চাকরিজীবী হয় তাহলে আপনি এই লোনের জন্য এপ্লাই করতে পারবেন। ট্রাস্ট ব্যাংকের স্যালারি লোন বাংলাদেশের সেরা স্যালারি লোন এর মধ্যে একটি। আপনি যদি ৫ লাখ টাকা লোন নেন ৫ বছরের জন্য তাহলে, আপনাকে যে ইন্টারেস্ট রেট এবং মাসিক ইনস্টলমেন্ট দিতে হবে।

  • ইন্টারেস্ট রেট: ১১.৫%
  • মাসিক ইনস্টলমেন্ট: ১০,৯৯৬.৩০ BDT

অতএব, আপনার লোনের ধরন অনুযায়ী, যে ব্যাংকে কম ইন্টারেস্ট রেট আপনি সেখান থেকে লোন নিতে পারেন।

ব্যাংক থেকে লোন নেবার আগে কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত?

যে কোন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে, আপনার কিছু বিষয় জেনে রাখা উচিত। যেমন,

  • আবেদনের আগে ক্রেডিট স্কোর জেনে নেওয়া: বেশিরভাগ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সময় গ্রাহকের ক্রেডিট স্কোর দেখা হয়, যা তাদের লোন পরিশোধের পরিমাণ নির্ধারণ করে।
  • সুদের হার ও লোন এর মেয়াদ সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জেনে নেওয়া: যে কোন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে সুদের হার এবং লোন এর মেয়াদ সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।
  • প্রসেসিং চার্জ জেনে নেওয়া উচিত: যে কোন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে সেই ব্যাংক লোনের প্রক্রিয়ার জন্য কত টাকা প্রসেসিং চার্জ নেবে তা জেনে নেওয়া উচিত।
  • লেট পেমেন্ট চার্জ: ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে লেট পেমেন্ট চার্জ জেনে নেওয়া উচিত। সাধারণত লেক পেমেন্ট চার্জ ৫% থেকে ১০% হয়ে থাকে।
  • প্রি পেমেন্ট চার্জ: ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে প্রি-পেমেন্ট চার্জ জেনে নেওয়া উচিত।

লোন পাওয়ার শর্ত কী?

ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় অন্যতম উপায় হলো, ব্যাংকের শর্তসূমহ পূরণ করা। ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সময় তাদের কি কি শর্ত আছে তা ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। শর্তগুলো আপনি পূরণ করতে পারবেন কিনা তা যাচাই করা উচিত। আপনি যদি সেই শর্তগুলো পূরণ করতে পারেন তাহলে, লোনের জন্য আবেদন করবেন। 

লোন পাওয়ার জন্য যেসব প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতে হবে, 

  • লোন নেওয়ার কারণ।
  • ব্যবসা বা চাকরিতে কত বছরের অভিজ্ঞতা আছে।
  • লোন নেওয়ার আপনি আপনার পরিকল্পনা।
  • আপনার ক্রেডিট হিস্ট্রি।
  • আপনার ব্যক্তিগত তথ্য।
  • আপনার ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট।
  • ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট।
  • আগে অন্য কোথা থেকে লোন নিয়েছেন কিনা।

ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে?

ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় হিসাবে ২য় ধাপ হলো কাগজ পত্র রেডি করা। ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য আপনাকে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হবে যেমন, 

  • আবেদন ফরম যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে এবং স্বাক্ষর সহ জমা দিতে হবে।
  • আপনার ফটোগ্রাফ দিতে হবে।
  • জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
  • অফিস আইডি কপি।
  • সেলারি সার্টিফিকেট।
  • যেকোনো বিলের কপি।
  • ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন অনুলিপি।
  • চেকবুক পেইজ।
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট।

ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য মূলত এই সব কাগজপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু, যদি অন্য কোন কাগজের প্রয়োজন হয় তাহলে, ব্যাংক আপনাকে আগে থেকে জানিয়ে দিবে।

আবেদন করার নিয়ম?

ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় হিসাবে ৩য় ধাপ হলে, আবেদন করা। ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করার জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, প্রথমে ব্যাংক থেকে লোনের আবেদন ফরম এনএফ পূরণ করতে হবে এবং লোন নেওয়ার কারণ ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। আপনার কত টাকা প্রয়োজন সব বিস্তারিত ফরমে দিতে হবে।

আপনাকে চেক করতে হবে ইনস্টলমেন্ট কিভাবে করতে হয় এবং সুদের হার কত। ফরম সাবমিট শেষে ব্যাংক আপনাকে ইন্টারভিউর জন্য কল করবে এবং সেখানে আপনাকে বিস্তারিত আপনার লোনের কারণ, কত টাকা লোন নিবেন, কি কারনে লোন নিবেন আরো অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।

তারপর ব্যাংক থেকে আপনার ভেরিফিকেশন করা হবে। আপনি যদি সঠিক কাগজপত্র জমা দিতে পারেন তাহলে আপনার ভেরিফিকেশন কমপ্লিট হবে এবং আপনি লোনের টাকা আপনার একাউন্টে পেয়ে যাবেন।

ব্যাংক লোনের সুবিধা ও অসুবিধা

ব্যাংক লোন নেওয়ার যেমন সুবিধা রয়েছে তেমন অসুবিধা রয়েছে। 

সুবিধা

বিপদের সময় ব্যাংক লোন আপনাকে অনেক সাহায্য করতে পারেন। আপনি আপনার কাজ সহজেই ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে করে ফেলতে পারবেন। বর্তমানে কিছু ব্যাংকের ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় বেশ সহজ।

অসুবিধা

আপনি যদি অযথা অনেক বেশি পরিমাণে লোন নিয়ে নেন এবং পরবর্তীতে তা পরিশোধ না করতে পারেন তাহলে, আপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, অনেক ব্যাংকের ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় বেশ ঝামেলার। এছাড়া, চড়া সুদের ঝামেলা তো আছেই।

পরিশেষে

ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম একটু কঠিন। কিন্তু সঠিক ভাবে আবেদন করতে পারলে আপনার বিপদের সঙ্গীত হয়ে দাঁড়াবে এই ব্যাংক লোন। আশা করি, ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় নিয়ে আর কোন প্রশ্ন নেই। আর, চাইলে বিকাশ থেকে লোন পাবেন কিভাবে? এই লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।

No comments:

Post a Comment

Allahuakbar

 Ki a job duniya